আমি কিভাবে একাধিক দেশে একাধিক স্কলারশিপ পেলামঃ ২য় ও শেষ পর্ব
IELTS স্কোর হাতে পাবার পর আমেরিকা, কানাডা, কোরিয়া সহ বেশ কিছু দেশে রিলেটেড সাবজেক্টের প্রফেসরদের মেইল করা শুরু করলাম। বেশি না, শ’দুয়েক মেইল করেছি। কয়েকজন রিপ্লাই দিয়েছে। কেউ বলেছে- আমার অলরেডি স্টুডেন্ট আছে, কেউ বলেছে- ফান্ডিং নাই ইত্যাদি।
দঃ কোরিয়ার Chosun University‘র এক প্রফেসর বলল- You Are Welcome To Our Faculty. ভাবলাম, কাজ হয়েছে মনে হয়। কিন্ত না! তারপর ওনাকে ৪/৫ টা মেইল দিলেও আর জবাব পাইনি।
কখনো হতাশ হইনি, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবার মত এক্ষেত্রেও প্রবল আত্মবিশ্বাস কাজ করেছে ‘আমি বিদেশে পড়বোই ইনশাআল্লাহ্’। সৌদির কিং আব্দুল আজিজে ইন্টারভিউ দিয়েছি, ফাইনালি রিজেক্টেড হয়েছি। তুরস্কে পরপর তিন বছর আবেদন করলেও নির্মমভাবে এরদোয়ান (!) আমাকে প্রতিবারই রিজেক্ট করেছে।
একটা ফেসবুক গ্রুপে বসনিয়ার বর্তমান কোর্সটির সন্ধান পেলাম। Medium of Instruction is English। ওদের শর্তাবলি পূরণ হওয়ায় আবেদন করলাম। টিউশন ফি মওকুফ করা হবে মর্মে কয়েকমাস পরে মেইল পেলাম। আমি ফিরতি মেইলে বললাম, আমার বাপের অত টাকা নেই যে, ইউরোপে বাপের টাকায় পড়তে যাবো। স্কলারশিপ দিলে আছি, নইলে খেলবোনা (!)।
কয়েকদিন পরে ওরা মেইল দিল-আচ্ছা, ঠিক আছে তোমাকে আমরা ফুল স্কলারশিপ-ই দিবো, আসো। পোস্টের মাধ্যমে ‘Offer Letter’ পাঠালো। ঢাকায় ওদের আ্যাম্বাসি না থাকায় দিল্লী যেতে হলো। ভিসা আবেদন করলাম, ইন্টারভিউ দিলাম; একমাস পর ভিসাও পেলাম। কিন্তু হায়! ততদিনে আমার সেমিস্টারের মিড-টার্ম পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। ওরা বলল, তাহলে পরের সেমিস্টারে আসো।
তারপর একদিন বাড়িতে বসে দাদুর সাথে গল্প করছি। হঠাৎ একটা মেইল আসল। ওপেন করে দেখি ইন্দোনেশিয়ার University of Yogzykarta থেকে ফুল ফ্রী স্কলারশিপের অফার লেটার সহ ভিসা আবেদনের সমস্ত ডকুমেন্টস্ পাঠিয়েছে। কবে আবেদন করেছিলাম, ভুলেই গিয়েছিলাম।
যাহোক, বসনিয়ার সমস্ত কিছু কনফার্ম হবার পর ইন্দোনেশিয়ার উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘না’ করে দিলাম। নানা জল্পনা-কল্পনা ও উৎকন্ঠার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপায় পূর্ব ইউরোপের বসনিয়া-হার্জেগোভিনার Faculty of islamic studies: Islam in Europe এ আরেকটি মাস্টার্সে এসেছি। কখনো ভাবিনি, শুরুতেই ইউরোপে যাবো। আলহামদুলিল্লাহ্, আমার ইন্টারেস্টের চেয়েও বেটার ফিল্ড পেয়েছি। ইউরোপ ও আমেরিকার ইসলাম, মুসলিম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার খুটিনাটি পড়ার সুযোগ হয়েছে।
যবনিকায় বলি, আমার এ জার্ণি সহজ ছিলনা। A+ ছিলনা, বিশ্ববিদ্যালয়েও শেষের সারির ছাত্র ছিলাম। প্রতিটি পদক্ষেপে আমার দুর্বলতা-অযোগ্যতা অন্তরায় হয়েছে। রবের করুণায় সবই সম্ভব হয়েছে।
و لله الحمد، و لك الشكر.
কতিপয় পরামর্শঃ
১. আত্নবিশ্বাসের সাথে মনস্থির করা (যেকোনো কাজেই এটি গুরুত্বপূর্ণ)।
২। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে তথ্য সংগ্রহ করা ও গুগলের সদ্ব্যবহার করা। সকল তথ্য এখন সহজলভ্য।
৩। ইউরোপে আসতে চাইলে অবশ্যই IELTS করা।
৪। আবেদনের শর্তাবলি ও নিয়মাবলি জেনে, ভালভাবে আবেদন করা।
৫। সর্বোপরি আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল (ভরসা) রেখে সিদ্ধান্তে অটল থাকা।
Sarajevo, Bosnia-Herzegovina
06.12.19
- আমি কিভাবে একাধিক দেশে একাধিক স্কলারশিপ পেলামঃ ২য় ও শেষ পর্ব - December 6, 2019
- আমি কিভাবে একাধিক দেশে একাধিক স্কলারশিপ পেলামঃ পর্ব-১ - December 3, 2019