ফ্রান্সের VLS-TS ভিসা অভিজ্ঞতা ২০১৯
প্রথমেই বলে নেই এখানে অতিরঞ্জিত কিছু নেই । সেদিন ঠিক যা যা হয়েছিল সেগুলো শেয়ার করছি। কাজের প্রেসারের কারনে ৩০ জুলাইয়ের রাতে ঘুমাই নাই। আবার টেনশনের ঠ্যেলায় ৩১ জুলাই ঘুমাই নাই । আমার ফ্রান্স এম্বাসিতে ভিসা ইন্টার্ভিউ ছিল ১ আগস্ট সকাল ৯ঃ৩০ এবং ১০;৩০ মিনিটে । এখানে বলে রাখা ভালো যে ফ্রান্সে লং স্টে স্টুডেন্ট ভিসার ইন্টার্ভিউ দুইটা হয়। একটা ফ্রান্স এম্বাসির কালচারাল সেকশন এবং অন্যটা মেইন এম্বাসিতে ।
১ আগস্ট ভাবলাম জ্যাম হবে তাই সকাল ৭;৪৫ এ বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। কপাল খারাপ হলে যা হয় আমাকে ৮ঃ১৫ তে নামায় দিলো এম্বাসির গেটের সামনে। একে নির্ঘুম চোখ তার উপর মাথার উপর তপ্ত সূর্য , অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। আশে পাশের চায়ের দোকান অনেক দূরে। আমি ৯ঃ১০ এ এম্বাসির কালচারাল সেকশনে গেলাম এসির ঠান্ডা বাতাস পেয়ে ঘুমে অবস্থা খারাপ। ভয় লাগতে শুরু করল যে গেল সব গেল আমার। ৯;৪৫ আবির্ভাব ঘটল মারগারেটের 😛 স্বর্ণকেশী মেয়েটা মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য আমার দিকে। আমিতো গুলু গুলু :P। হ্যান্ডশেকের পর্ব শেষে উপরে নিয়ে গিয়ে বসালো তার রুমে। হেসে বলতে শুরু করল
মারগারেটঃ আমি তোমার সব ফাইল দেখেছি এবং তোমার সম্পর্কে সব জানি । এবার তোমার নিজের সম্পর্কে কিছু বলো
আমি তার কথায় ভ্যবাকাচা খেয়ে গেলাম। এটা কেমন কথা । আরে আমার সম্পর্কে যদি সব জানো তাহলে আমার জিজ্ঞাস করছ কেন। হেসে বললাম
আমিঃ আমার মনে হয় তুমি বলতে চাচ্ছো যে আমার সম্পর্কে তুমি কি জানো না সেটা তোমাকে জানাতে ? মারগারেট আমার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে হেসে দিলো , বলল হ্যা সেটাই। আমিও বলা শুরু করলাম। সে এমন ভাবে আমার কথা শুনছে যে আমার প্রেমিকা হয় । কি মনোযোগ রে বাবা। Iftesham Chowdhury ভাইয়ের উপদেশের কথা মনে পরে গেল। ভাই বলেছিলেন ওরা হেসে হেসে বাশ দেয়। কন্ট্রল কখনো হারানো যাবে না।
মারগারেটঃ
-ফ্রান্স কেন ?
-অন্য কোথাও থেকে অফার লেটার পেয়েছি কিনা ?
– থাকব কোথায় ?
– আমার স্পন্সার কে ?
– গ্রেনাবল কেমন সিটি , আমার আইডিয়া আছে নাকি ?
– তুমি তো অনেক ট্রাভেল করো? কেন ট্রাভেল করো ?
– থাকো কোথায় ?
-ধানমন্ডি তো সুন্দর জায়গা। আমার কেমন লাগে ?
– আমার স্পন্সার কে ?
– মাসে কত খরচ হতে পারে ?
– আমার প্লান কি পড়াশুনা শেষে ?
কথা শেষে আবার হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ায় দিলো। আমি মিচকা শয়তানের মত আবারো হ্যাডশেক করলাম। সে বেশ দরদের গলায় বলল আমার ফিল্যান্সিয়াল কাগজ ঠিক আছে নাকি। ভিসা অফিসার নাকি কাগজ ঠিক না থাকলে ঝামেলা করে। বাই দ্যা ওয়ে মারগারেট আমার পাসপোর্ট ছাড়া কিছুই দেখতে চায় নাই। লিফটে উঠে জিজ্ঞেস করল আমাকে এত টায়ার্ড লাগছে কেন। আমি সব কিছুই বললাম। মেয়েটা শুনে বেশ খুশি হলো বুঝা গেল। আহা সেই চোখ , এখনো মনে আছে । মেইন গেটে এসে আবার হ্যান্ড শেক করল । তার শেষ কথা ছিল Congratulations and Thank You 🙂
আমি বললাম পরের শব্দটার মানে বুঝেছি বাট আগের শব্দটার অর্থ বুঝি নাই । সে হেসে ভিতরে চলে গেল। তার চলে যাওয়া পর্যন্ত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম । কাচের কুয়াশায় তার আবছায়া প্রতিবিম্ব। আমি বুঝলাম কাজ হয়ে গেছে । কনফিডেন্স বেড়ে গেল। ফ্রান্স ভিসা দেয় না কথাটার রেশিও কমে গেল।
পর্ব দুই
=====
ঠান্ডায় শরীর টা জুডিয়ে গিয়েছিল । আবার বাহিরের কড়া রোদে এসে দাড়ালাম। মেজাজ গরম হয়ে গেল। মাথা ঘুরছিল। ৩০ মিনিট রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ভিতরে আবার এসি। চেয়ারে গিয়ে বসতেই ঘুম চলে এলো। কিছুক্ষন ঘুমালাম। ১১ঃ৩০ মিনিটে আমার ডাক পরল। প্রস্তুত হয়ে নিলাম। মারগারেটের সাথে কথা বলার সময় কিছু মিস্টেক করেছিলাম যা পরে মনে হয়েছে। তাই ভাবলাম এইখানে এসব করা যাবে না। কিন্তু আমার স্পিড কে পানি করে দিয়ে ফরাসী ভিসা অফিসার খালি একটা কথা বল
কোন ইউনিভার্সিটি ?
এর পর আমার ফাইল দেখা শুরু করল। আমি যা যা দিয়েছিলাম।
১. আবেদন ফর্ম
২. ছবি ২ কপি
৩. ভিসা রিসিপ ( টাইম আর বার কোড দুইটা )
৪. পাসপোর্ট
৫. পাসপোর্টে ভ্যালিড বা মেয়াদ আছে সেসব দেশের ভিসার সেগুলোর ফটোকপি
৬. ভার্সিটির অফার লেটার
৭. সব গুলো ডিগ্রী সার্টিফিকেট
৮. Crous হাউজিং এর ১ বছরের লেটার
৯. স্পন্সারশিপের দলিল
১০. বাবার ব্যাংক স্টেটমেন্ট
১১. বাবার ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে প্রোপার্টি ইভোলিউশন
১২. বাবার ট্যাক্স সার্টিফিকেট
১৩ বাবার পাসপোর্ট ফটোকপি
১৪ মায়ের ব্যাংক স্টেট্মেন্ট
১৫. মায়ের প্রৈপারটি ইভোলিউশন
১৬. মায়ের ইনকাম ট্যাক্স
১৭। মায়ের জব সার্টিফিকেট
১৮। মায়ের NID কপি
১৯. আমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট
২০. পুলিশ কিলিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
২১. সকল জব আর ইন্টারনশিপের সার্টিফিকেট
২২. IELTS এর সার্টিফিকেট
২৩. হাউজিং ইন্সুরেন্স ১ বছরের
২৪. ভিসেল গ্যারান্টর সার্টিফিকেট
২৫. এয়ার টিকিট বুকিং
আমি আসলে বেশকিছু কাগজ এক্সট্রা হিসেবে দিয়েছি কারন
সেলফ ফান্ডেড হিসেবে কোন রিস্ক নিতে চাচ্ছিলাম না। শেষে টাকা পে করতে বলল এবং অরিজেনাল ফাইল গুলো ফেরত দিলো। পাশের বুথে গিয়ে ফিঙ্গার দিলাম আর রশিদ টা নিলাম। ছেলেটা বাংলাদেশী এবং হেসে কথা বলছিল আমার সাথে। আমি চান্স পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম , আমার ফাইলে কি ভিসা অফিসার নেগেটিভ কিছু লিখেছে নাকি । সে ফাইল দেখে বলল না । আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম মারগারেট কেন আমাকে Congratulations দিলো এটার মানে বুঝলাম না। সে আবার হেসে বলল এমনি দিছে মেবি । যে উৎসাহ পেয়েছিলাম কিছু আগে সেই হাসির মধ্যে সেটা মিলিয়ে গেল। আমি মনে মনে ভাবলাম যাক গেল সব গেল । এত কষ্ট 🙁
.
বাসায় এসে ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠার পরে টেনশন ধরে গেল । ফ্রান্সে বসবাসরত কিছু সিনিয়ার ভাই বোনদের কল দিয়ে অহেতুক কতক্ষন জালালাম। এদের মন থেকে ধন্যবাদ, আমার অনেক প্যাচাল সজ্য করছেন।
.
১৮ আগস্ট
=========
আম্মু দুপুরে বাদাম ভর্তা আর লাউ শাক রান্না করেছেন। মুখে বড় একটা ভাতের দলা কেবল চালান করেছি। ভাতিজি এসে কল দিলো। TNT নাম্বার দেখে বুঝলাম মেবি ফ্রান্স এম্বাসি । আমাকে জানানো হলো যে আমার পাসপোর্ট রেডি। আমি চাইলেই নিয়ে আসতে পারি।
.
১৯ আগস্ট
========
ফ্রান্স এম্বাসি খুব সহজ ভাবে বাশ দেয়। এটা এইদিন বুঝলাম। আমরা বিভিন্ন ভিসার ক্যাটাগরিতে ২৫ জন ছিলাম। যাদের পাসপোর্ট দেবার সময় কাগজে সাইন নিচ্ছে তাদের রিফিজ করছে , আর যাদের নিচ্ছে না তাদের ভিসা দিচ্ছে। বিলিভ মি রিজেক্টের বন্যা। এর মধ্যে ভয় পেতে শুরু করেছি। রিজেক্ট খাওয়ার পরে মানুষের চেহারা কেমন হয় দেখলাম। একে একে রুম ফাঁকা। আমি আর একটা ছেলে বসে আছি শুধু। এর পর আমার নাম ডাকা হলো । Congratulations দিলো। আমি খুশির ঠ্যেলায় বললাম সেম টু ইউ 😛
.
University: Grenoble Institute of Technology
Subject: M.Sc in Electrical for smart grids and buildings
- ফ্রান্সের VLS-TS ভিসা অভিজ্ঞতা ২০১৯ - August 19, 2019