অন্যান্যচিকিৎসাপ্রবাস জীবনস্লোভেনিয়া

করোনার রাজ্যে স্লোভেনিয়ায় বসবাস করা শিক্ষার্থীরা!

Last updated on November 18th, 2020 at 01:04 pm

স্লোভেনিয়াতে ক্রমশ বেড়েই চলছে কোভিড-১৯ খ্যাত নোভেল করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। সারা বিশ্বে আজকে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে এ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। গতকাল ৩০ শে মার্চ, ২০২০ স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় স্লোভেনিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী স্লোভেনিয়াতে এখন পর্যন্ত ৭৫৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পজিটিভ ধরা পড়েছে যে সংখ্যাটি গত পরশু অর্থাৎ ২৯ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত ছিলো ৭৩১ জনে অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে নতুন করে আরও ২৫ জন এ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। একই সাথে গত ছয় দিনে আরও নয় জনের মৃত্যুর খবর দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যাঁদের মধ্যে দুই জন ছিলেন স্লোভেনিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর ছেলইয়ে এর অধিবাসী। এ নিয়ে স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা পৌঁছালো এগারোতে আর এ পর্যন্ত সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরেছেন দশ জন। গত ১৯ শে মার্চ থেকেই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য সম্পূর্ণ স্লোভেনিয়াতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিলো যা এখনো বলবৎ আছে । তবে এখনও স্লোভেনিয়ার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে বিশেষ করে অনেক ফ্যাক্টরি রয়েছে যেগুলো এখনও সীমটি পরিসরে হলেও তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করছে বলে জানা গিয়েছে। সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত ১৬ই মার্চ থেকে পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলও আশা করা যাচ্ছে যে আগামী এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখের পর্যন্ত সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে।বন্ধ রাখা হয়েছে সকল ধরণের বাস ও ট্রেন সার্ভিস চলাচল এবং পরিস্থিতির সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটা পর্যন্ত দেশটির রাজধানী লুবলিয়ানাতে অবস্থিত ইয়োজে পুচনিক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকেও সকল ধরণের বিমান চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় না রেখে যদি একই স্থানে পাঁচ জনের অধিক জমায়েত হয় তাহলে প্রত্যকেকে ৪০০ ইউরো করে জরিমানা করা হবে। এছাড়াও গতকাল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে এখন থেকে খুব বেশী প্রয়োজন না হলে কেউ এক মিউনিসিপ্যালিটি থেকে অন্য মিউনিসিপ্যালিটিতেও যাতায়াত করতে পারবে না এবং যে কোনও পাবলিক প্লেসে যাতায়াত করতে হলে এখন থেকে সকলকে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করতে হবে। যে কোনও জরুরি প্রয়োজনে ১১২, ০৮০১৪০৪ কিংবা  +৩৮৬৩১৬৪৬৬১৭ এ তিনটি নম্বরের যে কোনও একটি নাম্বারে ফোন দিতে বলা হয়েছে বিশেষ করে কেউ যদি মনে করেন যে তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও স্লোভেনিয়াতে বসবাসরত অন্য দেশের নাগরিকদেরকে নিজ দেশের নিকটস্থ অ্যাম্বাসি কিংবা কনস্যুলেট অফিসের সাথেও যে কোনও প্রয়োজনে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেশী ইতালির মতো ক্রোয়েশিয়া এবং হাঙ্গেরির সাথেও স্লোভেনিয়ার সীমান্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট পয়েন্ট ছাড়া বাকি সকল ক্ষেত্রে অস্ট্রিয়ার সাথে স্লোভেনিয়ার সীমান্ত আপাততঃ বন্ধ রয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গোটা পৃথিবীর মধ্যে ইতালি সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে থাকলেও পশ্চিম স্লোভেনিয়াতে অর্থাৎ স্লোভেনিয়া ও ইতালির সীমান্তবর্তী অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে কম এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ অঞ্চলে মাত্র নয়জনকে শনাক্ত করা গিয়েছে যাদের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে যা সত্যি আশ্চর্যজনক।




পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো স্লোভেনিয়াতেও বিস্তার লাভ করা করোনা ভাইরাসের প্রভাব দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষের জনজীবনে প্রবলভাবে হতাশা বিরাজ করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্লোভেনিয়ার ইনস্টিটিউট অব ম্যাক্রোইকোনোমিক অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষ থেকে চলতি অর্থ বছরে স্লোভেনিয়ার প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিলো সাড়ে তিন শতাংশ কিন্তু সাম্প্রতিককালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো স্লোভেনিয়াতেও ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এ প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে দেশটির অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন। এদিকে শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় এক রেডিও বার্তায় দেশটির অর্থমন্ত্রী আন্দ্রেই শিরচেলির পক্ষ থেকে এ পরিস্থিতিতে যাঁরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তাঁদের পূর্ণবাসনের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে এ সময়ে আত্মনির্ভরশীল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যাঁদেরকে প্রতিমাসে সরকারকে ৪০০ ইউরো করে প্রদান করতে হতো কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তাঁদেরকে এ অর্থ প্রদান করতে হবে না বলে স্লোভেনিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বেসিক অর্থ বরাদ্দ প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। এছাড়াও যাঁরা শিক্ষার্থী রয়েছেন তাঁদেরকে আগামী এপ্রিল এবং মে এ দুইমাস ২০০ থেকে ৩০০ ইউরো করে আর্থিক অনুদান প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। এছাড়াও এ পরিস্থিতির কারণে এ সময়ে যাঁরা সাময়িকভাবে বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছেন তাঁদেরকে এপ্রিল এবং মে এই দুই মাসে ৭০০ ইউরো করে অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথাও এ প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে। একই সাথে কৃষক এবং স্লোভেনিয়াতে যাঁরা পেনশনভোগী তাঁদেরকেও বিশেষভাবে সহযোগিতা করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথাও এ প্রস্তাবনায় উঠে এসেছে। আশা করা যাচ্ছে যে সম্পূর্ণ প্রস্তাবনাটি এ সপ্তাহের মধ্যে দেশটির জাতীয় সংসদে পাশ হতে পারে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে এখনও বেশ কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছে। স্লোভেনিয়াতে যাঁরা অন্যান্য দেশের অভিবাসী রয়েছেন তাঁদের বিষয়ে আসলে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে কোনও নির্দেশনা আসে নি। বিশেষ করে এক সময় যুগোস্লাভিয়ার অধীনে থাকা অন্যান্য দেশ যেমনঃ বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, কসোভো, ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো এ সকল দেশের থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইমিগ্র্যান্ট স্লোভেনিয়াতে বসবাস করেন এবং তাঁদের অনেকের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে স্লোভেনিয়াতে। অনেকে আবার এখানে বিভিন্ন ধরণের জীবিকার সাথে জড়িত এবং কেউ বা আবার স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন শিক্ষা-প্ৰতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছেন। তাঁদের বিষয়ে আসলে এখন পর্যন্ত স্লোভেনিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ঘোষণা আসে নি, এমনকি এ সকল আর্থিক সাহায্যের অংশীদার তাঁরা হতে পারবেন কি না কিংবা এদের মধ্যে যাঁদের এ মুহূর্তে এ পরিস্থিতির জন্য কোনও কাজ নেই কিংবা যাঁদের রেসিডেন্স পারমিট প্রায় শেষের দিকে তাঁদের ব্যাপারেও স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত স্লোভেনিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আসে নি।



মুশফিক হাসান স্লোভেনিয়াতে বসবাসরত একজন প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যিনি ইরাসমাস মুন্ডুস শিক্ষাবৃত্তির আওতায় ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানার অধীনে ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো স্লোভেনিয়াতেও ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তিনি বেশ শঙ্কিত। স্লোভেনিয়ার সরকার সাময়িক সময়ের জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় তিনি খানিকটা অস্বস্তিত্বে পড়েছেন। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তারপরেও ইউনিভার্সিটি খোলা থাকলে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যেতো যেমনঃ নিয়মিত লাইব্রেরি অথবা গ্রুপ ওয়ার্ক কিংবা সরাসরিভাবে কোনও শিক্ষকের অধীনে থেকে কোনও একটি প্রজেক্টে কাজ করা এখন সে সকল সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এছাড়াও সচরাচর সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্তমান সেমিস্টার শেষ করতে পারাটা আদৌতে সম্ভব কি না তা নিয়েও তিনি বেশ সন্দিহান। তবে ইউরোপের অন্যান্য অনেক দেশ যেমনঃ ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, জার্মানির তুলনায় স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাসের বিস্তার তুলনামূলক কম থাকায় এবং একই সাথে তাঁর ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে এ ধরণের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে যার কারণে তিনি এখনও অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারছেন বলে জানিয়েছেন।
মনিকা জিভেচ, একজন শিক্ষার্থী যিনি স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে ফ্যাশন ডিজাইনিং অ্যান্ড বিউটি থ্যারাপির ওপর ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করছেন। পাশাপাশি তিনি ম্লিনোটেস্ট নামক একটি বেকারি শপে পার্টটাইম কাজ করেন। ম্লিনোটেস্ট স্লোভেনিয়াতে মূলতঃ একটি চেইন শপ কিন্তু এ পরিস্থিতির কারণে তিনি কাজে যেতে পারছেন না। পাশাপাশি এ মুহূর্তে তাঁর কলেজ বন্ধ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যেমনঃ গ্রেট ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এ সকল দেশে আইন আছে একজন স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় সপ্তাহে হয় তো বা বিশ ঘণ্টা কিংবা ত্রিশ ঘণ্টার বেশী কাজ করতে পারবেন না স্লোভেনিয়ার আইনে এরকম কিছু বলা নেই এবং এ কারণে স্লোভেনিয়াতে চাইলে একজন শিক্ষার্থী ফুলটাইম কাজও করতে পারেন। একারণে অনেক কোম্পানি কিংবা অনেক রেস্টুরেন্ট অথবা দোকানের পক্ষ থেকে যখন কোনও একজন শিক্ষার্থীকে চাকুরির অফার দেওয়া হয় তখন স্বভাবতই কর্তৃপক্ষ চায় তাঁকে দিয়ে ফুলটাইম কাজ করাতে। কিন্তু বেশীর ভাগ স্টুডেন্টের পক্ষে লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুলটাইম অর্থাৎ দিনে সাত আট ঘণ্টা কাজ করে পড়াশুনা করার সুযোগ হয় না। মনিকা আইডসচিনার একজন বাসিন্দা এবং আইডসচিনা আসলে একটি মফস্বল এলাকা যাঁর দূরত্ব স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানা থেকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার। এরকম পরিস্থিতিতে যদি তাঁর চাকুরি চলে যায় তাহলে এটি হবে তাঁর জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘাঁয়ের মতো। প্রথমত এখন যেহেতু স্লোভেনিয়াতে পর্যটকদের সে রকম আনাগোনা নেই এবং সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে কেউই আসলে খুব বেশী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের হতে পারছেন না তাই মনিকার পক্ষে এই মুহূর্তে কোনও খদ্দের পাওয়া সম্ভব না যিনি কোনও বিউটি ট্রিটমেন্ট কিংবা ম্যাসাজ থেরাপির জন্য আগ্রহী বিশেষ করে আইডসচিনার মতো ছোটো এলাকায় এটা সম্ভবই না। অন্যদিকে তাঁর এ চাকুরি চলে গেলে নতুন করে তাঁকে কোনও অন্য চাকুরি খুঁজে বের করতে হবে যা এ ধরণের পরিস্থিতিতে প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। ইউরোপের অন্যান্য অনেক দেশ যেমন ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মান, সুইজারল্যান্ড এ সকল দেশের তুলনায় স্লোভেনিয়াতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেকটা সীমিত এবং এ বিষয়ে মনিকাকে প্রশ্ন করা হলে মনিকা জানান যে গোটা স্লোভেনিয়া আসলে ডিসেন্ট্রালাইজড অর্থাৎ স্লোভেনিয়াতে মানুষের জীবনযাত্রা কেবল মাত্র বড় শহর যেমন লুবলিয়ানা কিংবা মারিবোরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; পাশাপাশি স্লোভেনিয়ার জনসংখ্যার ঘনত্ব খুবই কম। গোটা স্লোভেনিয়া সুউচ্চ পর্বতমালা ও ঘন বন-জঙ্গল দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ায় এখানে জনবসতি অত্যন্ত বিক্ষিপ্ত যার প্রভাবে স্লোভেনিয়াতে সে রকম হারে এখন পর্যন্ত ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে নি। এছাড়াও তিনি স্লোভেনিয়ার সরকারের ঘোষিত বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রশংসা করেন, যখন ইতালি এবং স্পেনে সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে তখনই সরকারের কিছু পদক্ষেপ যেমনঃ ইতালির সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে মানুষের চলাচল ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এবং একই সাথে স্লোভেনিয়ার সাধারণ মানুষকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কমর্কান্ডে সচেষ্ট হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করায় স্লোভেনিয়াতে এ সকল দেশের মতো এতো ব্যাপক হারে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে নি বলে মনিকা অভিমত পোষণ করেছেন। 
বোগদান পেট্রোভিচ, স্লোভেনিয়াতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছার ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের একজন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট। স্লোভেনিয়ার সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান যে সাম্প্রতিক এ পরিস্থিতি তাঁর কপালে  বিশেষভাবে ভাঁজের সৃষ্টি করছে বিশেষ করে বাহিরে কোথাও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হতে না পারায় এবং একই সাথে তিনি যেহেতু পড়াশুনার পাশাপাশি পার্টটাইম জবের সাথেও জড়িত কিন্তু এ পরিস্থিতির কারণে তিনি আসলে কাজে যেতে পারছেন না তাই এক ধরণের হতাশার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর দিন্ পার করছেন। তবে তাঁর নিজ দেশ সার্বিয়ার তুলনায় স্লোভেনিয়া এখন পর্যন্ত বেশ স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে রয়েছে বলে তিনি তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাঁর দেওয়া তথ্য মতে গত শুক্রবার পর্যন্ত সার্বিয়াতে ৬৫৯ জনের মতো আক্রান্ত হয়েছেন এ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস দ্বারা এবং এদের মধ্যে প্রায় দশ জন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইউরোপের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে সার্বিয়া অনেকটা দূর্বল আর এ কারণে দেশটির চিকিৎসা সেবার মান খুব বেশী একটা সন্তোষজনক নয়। যদিও সার্বিয়ার সরকার এ পরিস্থিতিতে চীন থেকে করোনা ভাইরাস টেস্ট করার কীট এবং অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জামাদি আমদানি করার ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু তার মতে সার্বিয়ার সরকার এখনও ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো এ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে তেমনটা গুরুত্বের সাথে নেয় নি বলে তিনি জানিয়েছেন। যদিও সার্বিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনা ব্রানাভিচ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশটিতে কারফিউ জারি করেছেন এবং রাজধানী বেলগ্রেডসহ দেশটির সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে জরুরি সেনা মোতায়ন করেছেন কিন্তু দেশটিতে আইনের শাসন অনেকটা সীমিত হওয়ায় ও একই সাথে দেশের সাধারণ মানুষের আইনের প্রতি তেমন শ্রদ্ধাশীল না হওয়ায় আদৌতে সার্বিয়া আদৌতে কতোটুকু সফল হবে সামগ্রিক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে তা নিয়ে তিনি বেশ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।



আলেকজান্ডার চিষ্টিয়াকোভ বোগদান পেট্রোভিচের মতো তিনিও ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছাতে অধ্যয়নরত একজন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট যিনি পরিবেশ বিজ্ঞানের ওপর ব্যাচেলর সম্পন্ন করছেন। তাঁর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান এখন পর্যন্ত যেহেতু তিনি সুস্থ্য রয়েছেন তাই আদৌতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি এখনও নির্ভার। তবে তাঁর দেশ রাশিয়ার সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন। এখন পর্যন্ত রাশিয়াতে ১২০০ এর অধিক মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ খ্যাত নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পজিটিভ ধরা পড়েছে যাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলে তিনি বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়েছেন। তবে রাশিয়াতে আদৌতে সে অর্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকায় এবং গণমাধ্যমগুলোর ওপর সরকারের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে তিনি বেশ হতাশা প্রকাশ করেছেন কেননা তাঁর মতে হয়তো বা এহেন পরিস্থিতিতে দেশটির গণমাধ্যমগুলো কতোটা প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে পারবে তা নিয়ে তিনি বেশ সন্দিহান।
আক্ষরিক অর্থে আমরা কেউই বলতে পারি না সামগ্রিকভাবে কবে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। একদিকে যেমন প্রতিদিন নতুন করে কোভিড-১৯ খ্যাত নোভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সারা পৃথিবীতে এবং অনেকে এর প্রভাবে মৃত্যুবরণও করছেন অন্যদিকে গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটি বড় দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে চাকুরি হারিয়ে বেকার, অনির্দিষ্টকালের জন্য সকলেই এক ধরণের গ্যাঁড়াকলে আবদ্ধ। এ ভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত নেই কোনও কার্যকরী ভ্যাকসিন, নেই সঠিক কোনও চিকিৎসা। কোনও ধরণের সামরিক যুদ্ধ নয়নয় কোনও ধরণের পারণবিক অস্ত্র কিংবা নয় কোনও কোনও ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগসামান্য কয়েক ন্যানোমিটারের ক্ষুদ্র এক মাইক্রোঅর্গানিজমের কাছে আজ গোটা পৃথিবী অসহায়। খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কোনও এক অদৃশ্য শক্তি রূপেই গোটা পৃথিবীকে সে অচল করে দিচ্ছে এবং বিশ্বের প্রায় সকল দেশ এক হয়েও রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে এ ক্ষুদ্র অণুজীবটির কাছেসমগ্র পৃথিবী যেনও আজ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে শুধু মাত্র এই একটি ভাইরাসের কারণে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাসটি আজ অ্যান্টার্টিকা ছাড়া গোটা পৃথিবীতেই বিস্তার লাভ করেছে এবং প্রতিনিয়ত মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে যাচ্ছে।তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া বিখ্যাত রসায়নবিদ মাইকেল লেভিট যিনি ২০১৩ সালে মাল্টিস্কেল মডেলিং এর ওপর গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি সম্প্রতি বলেছেন যে হয় তো বা এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নাটকীয়ভাবে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর হার কমতে শুরু করবে। তাঁর এ দাবিকে তিনি একটি গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করেছেন এবং তিনি বলেছেন যে চীনে যেভাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এ ভাইরাসে সংক্রমণের হার কমে আসতে শুরু করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এ সময়কে আদর্শ হিসেবে ধরে নিলে আগামী এপ্রিল মাসেই আমাদের জন্য এক সুসংবাদ অপেক্ষা করছে। মাইকেল লেভিটের এ ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হলে খুব শীঘ্রই আমাদের জন্য নতুন এক ভোরের অপেক্ষা করছে।
  
রাকিব হাসান
শিক্ষার্থী,
দ্বিতীয় বর্ষ,
ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স,
ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া
ফেসবুক মন্তব্য
Mahedi Hasan
 
শেয়ার করুনঃ

Mahedi Hasan

স্বপ্নবাজ ও ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষ। নতুন কিছু জানতে ও শিখতে ভালো লাগে। নিজে যা জানি তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। বর্তমানে জার্মানিতে পড়াশোনা করছি।আমার সম্পর্কেঃ http://www.hmahedi.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + 4 =

Upcoming Events